জানি আমি তোমার দু’চোখ আজ আমাকে খোঁজেনা আর পৃথিবীর’ পরে- বলে চুপে থামলাম, কেবলি অশত্থ পাতা পড়ে আছে ঘাসের ভিতরে শুকনো মিয়োনো ছেঁড়া;- অঘ্রান এসেছে আজপৃথিবীর বনে; সে সবের ঢের আগে আমাদের দুজনের মনে হেমন্ত এসেছে তবু; বললে সে, ‘ঘাসের ওপরে সব বিছানো পাতার মুখে এই নিস্তব্ধতা কেমন যে- সন্ধ্যারআবছা অন্ধকার ছড়িয়ে পড়েছে জলে; কিছুক্ষণ অঘ্রাণের অস্পষ্ট জগতে হাঁটলাম, চিল উড়ে চলে গেছে-কুয়াশার প্রান্তরের পথে দু-একটা সজারুর আসা-যাওয়া; উচ্ছল কলারঝড়ে উড়ে চুপে সন্ধ্যার বাতাসে লক্ষ্মীপেঁচা হিজলের ফাঁক দিয়ে বাবলার আঁধার গলিতে নেমে আসে; আমাদের জীবনের অনেক অতীত ব্যাপ্তি আজো যেন লেগে আছে বহতা পাখায় ঐ সব পাখিদের ঐ সব দূর দূর ধানক্ষেতে, ছাতকুড়োমাখা ক্লান্ত জামের শাখায়; নীলচে ঘাসের ফুলে ফড়িঙের হৃদয়ের মতো নীরবতা ছড়িয়ে রয়েছে এই প্রান্তরে বুকে আজ…… হেঁটে চলি….. আজ কোনো কথা নেই আর আমাদের; মাঠের কিনারে ঢের ঝরা ঝাউফল পড়ে আছে; খড়কুটো উড়ে এসে লেগে আছে শড়ির ভিতরে, সজনে পাতার গুঁড়ি চুলে বেঁধে গিয়ে নড়ে-চড়ে; পতঙ্গ পালক্ জল-চারি দিকে সূর্যের উজ্জ্বলতা নাশ; আলোয়ার মতো ওই ধানগুলো নড়ে শূন্যে কী রকম অবাধ আকাশ হয়ে যায়; সময়ও অপার-তাকে প্রেম আশা চেতনার কণা ধরে আছে বলে সে-ও সনাতন;-কিন্তু এই ব্যর্থ ধারণা সরিয়ে মেয়েটি তাঁর আঁচলের চোরাকাঁটা বেছে প্রান্তর নক্ষত্র নদী আকাশের থেকে সরে গেছে যেই স্পষ্ট নির্লিপ্তিতে-তাই-ই ঠিক;- ওখানে সিগ্ধ হয় সব। অপ্রেমে বা প্রেমে নয়- নিখিলের বৃক্ষ নিজ বিকাশে নীরব।
ছোট্ট একটা ঘর আমার ছোট্ট একটা মন। সেই ঘরেতে বাস করে আমার প্রিয় জন.. ছোট্ট দুটি আখি তার ছোট ছোট পা তাই দেখে উরে গেল আমার পরান টা… – অবসর সময়ে দু একটা কবিতা লেখে পথ..চাকরি করার পর সময় মেলেই না..একটা প্রাইভেট কম্পানীতে ছোট খাট একটা জব করে..সকাল ৭.৩০ সময় বাসা থেকে বের হয় পথ..বাস স্ট্যান্ডে দাড়িয়ে থাকে বাসের জন্য..এই সময়টা অনেক ব্যস্ত থাকে নগরী..সবাই যার যার কাজের গন্তব্যে যাওয়ার জন্য ব্যস্ত..অনেক কষ্ট করে বাসে উঠতে হয়..তাও আবার দাড়িয়ে থাকতে হয় অনেক সময়. – প্রায় প্রতিদিন এমনই হয়..স্ট্যান্ডে অনেকেই দাড়িয়ে থাকে..কিন্তু পথের নজর কারে একটা মেয়ে..প্রতিদিন বাসের জন্য অপেক্ষা করে..মনে হয় স্টুডেন্ট হবে..হাতে বই থাকে সব সময়.. – পথ প্রতিদিন লক্ষ করে মেয়েটাকে..কিন্ত ু সময়ের অভাবে কথা বলা হয় না.. – মেয়েটা লক্ষ করে কিনা কে জানে.? – প্রতিদিনের মত অফিস থেকে ফিরে রেস্ট নিচ্ছে পথ..আর মনে মনে ভাবছে মেয়েটার কথা.. – রেহানা বেগম পথের রুমে আসলেন..পথের মা ইনি..বাবা পথ অনেক ত বয়স হল এবার একটা বউ নিয়ে আয় ঘরে..দেখ আমার অবস্থাও ভাল না..কত দিন আর বাঁচব..যাওয়ার আগে তোর সুখের সংসারটা দেখে যেতে চাই.. – মা তুমি এভাবে বলছ কেন..তুমি যদি এভাবে বল তাহলে আমি কি সইতে পারি.? – তাহলে এবার বিয়ের জন্য মত দে..আমি একটা মেয়ে দেখেছি তোর জন্য..তুই হ্যাঁ বললেই পাকা কথা বলব.. – মা আমাকে আর ১০ দিন সময় দেও..আমি একটু ভেবে দেখি.. – আচ্ছা ভেবে দেখ..তবে ১০ দিনের বেশি সময় দিতে পারব না.. – তাতেই হবে.. – ফ্রেস হয়ে টেবিলে আয়..আমি খাবার দিচ্ছি.. – রাতের খাবার খেয়ে পথ বিছানায় শুয়ে ভাবছে মেয়েটার কথা..কাল ত শুক্রু বার,ছুটির দিন.মেয়েটার সাথে দেখা হবে না..মনটা খারাপ হয়ে গেল পথের.. – পরের দিন সকাল ১০টায় ঘুম ভাঙল পথের..বিছানা থেকে উঠে নাস্তা করল..তারপর বসল টিভি দেখতে..সপ্তাহে দুই দিন একটু টিভি দেখার সময় হয়.. – পথ জুম্মার নামাজ পরে বাসায় এসে খাওয়া দাওয়া সেরে রেস্ট নিচ্ছে..চিন্তা করছে বিকেলের সময়টা কি করবে..?হটাত মনে পরল অনেক দিন পার্কে গিয়ে সূর্য ডোবা দেখা হয় না.. – পথ পার্কে বসে আছে এক কর্নারে..আশে পাশে অনেক মানুষ ঘুরতে এসেছে..সবাই অনেক হাসি খুশি..পথ দেখল একটা মেয়ে তার দিকে আসছে..অনেকটা পরিচিত লাগছে..খানিকটা কাছে আসতেই পথ চিনে ফেলল মেয়েটাকে..এ যে সেই বাস স্ট্যান্ডের মেয়েটা.. – পথ অনেক খুশি..যাক আজকেও দেখা হয়ে গেল..আজ কি বলে দেবে মেয়েটাকে যে,তাকে অনেক পছন্দ আমার.. – মেয়েটা পথের সামনে এসে দাড়াল..আচ্ছা আপনি কি আমাকে ফলো করছেন.? – পথ কেমন জানি ফিল করছে..বুকের ভিতর ধুক ধুক করছে.. – কি হল উত্তর দিচ্ছেন না যে.. – কই না ত..আমি ত আপনার ফেবু আইডি জানি না আর ফলো কিভাবে করব.. – আমি ফেবুর কথা বলছি না..আমি যেখানেই যাই সেখানেই আপনি থাকেন..ব্যাপার কি..? – পথ কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না..তা দাড়িয়েই কথা বলবেন না কি বসবেন..? বসে কথা বলতে সমস্যা নাই ত আপনার..? – মেয়েটা বসল..তারপর জিজ্ঞেস করল আপনি কি করেন.? – পথ উত্তর না দিয়ে বলল,আপনার নামটা কি জানতে পারি..? – নাম দিয়ে কি করবেন.?আগে আমার প্রশ্নের জবাব দিন.. – আসলে আমি আপনাকে ফলো করি না..কাকতালিয় ভাবে আমাদের দেখা হয়ে যায়..হয়ত উপর থেকেই সব করা হচ্ছে..আর আমি একটা প্রাইভেট কম্পানিতে জব করি..আর আমার নাম পথ. – হুম..সবই বুঝলাম..তবে আপনার নামটা যেন কেমন অদ্ভুত..পথ,শুনল েই কেমন যানি একটা ফিল হয়..যাই হোক না বলতেই সব বলে দিয়েছেন..আমার নাম পরী..পরাশুনা করি ৩য় বর্ষ এবার.. – দু জনের কথা বলতে বলতে সন্ধ্যা হয়ে এসেছে..সূর্য অস্ত যাচ্ছে..পথ সূর্য অস্ত যাওয়া দেখছে..সূর্যের লাল রঙ পরীর মুখে এসে পরেছে..দেখতে এখন পরীর মতই লাগছে.. – আচ্ছা আজ তাহলে উঠি..সন্ধ্যা হয়ে এসেছে.. – আচ্ছা নাম্বারটা কি পেতে পারি..? – পরী মুচকি একটা হাসি দিয়ে বলল ০১৯২৭ বাকি ডিজিট গুলো অন্য এক দিন দেব..যে দিন আবার কাকতালিয় ভাবে দেখা হবে আমাদের.. – পথ একটু অবাক হয়ে চেয়ে রইল…পরী চলে গেল.. – ৭ দিন হয়ে গেল,পরীকে আর দেখা যাচ্ছে না বাস স্ট্যান্ডে..পথ পাগলের মত হয়ে খুজে যাচ্ছে এখানে সেখানে..সারা শহরের সব কয়টা রেস্টুরেন্ট,পার ্ক,শপিং মল..কোথাও দেখা মেলে না পরীর..অফিসের কাজেও মন বসে না..অফিস থেকে ৩ দিনের ছুটি নেয় পথ.. – – বাসায় ফিরে ভাবছে কি করবে এবার..কোথায় পাব পরীকে..পরীর দেওয়া অর্ধেক নাম্বারটার কথা মনে পরল…বাকি ডিজিটগুলা বসিয়ে অনেক ট্রাই করল কিন্তু কোন নাম্বারই পরীর না.. – আজ ৮ম দিন…মার জানি কি হয়েছে..অনেক অসুস্থ হয়ে পরেছে..হাসপাতাল ে ভর্তি করেছে পথ..চিন্তায় কুল কিনারা পাচ্ছে না.. – পথের একটা বন্ধু আছে..খুব কাছের বন্ধু..এই শহরেই থাকে..একটা প্রাইভেট কম্পানিতে জব করে..ছোট বেলা থেকেই এক সাথে বড় হয়েছে দুই জন..পার্থ নাম.. – পথ ফোন করে সব কিছু জানায় পার্থকে.. – পার্থ সব শুনে চলে আসে হাসপাতালে..দুই জনে মিলে অনেক চিন্তা ভাবনা করে সিদ্ধান্ত নেয় মা সুস্থ হলেই মাকে বিয়ের জন্য হ্যাঁ বলে দেবে পথ..কিন্তু পথ একা বিয়ে করবে না সাথে পার্থও..দুই বন্ধু একসাথে বিয়ে করবে.. – পথ ডাক্তারের কাছে গেল..কত দিন লাগবে সুস্থ হতে..? – ডাক্তার বললেন প্রায় ১০-১৫ দিন ত লাগবেই..তবে কাল বাসায় নিয়ে যেতে পারবেন এবং পূর্ন রেস্টে রাখবেন.. – পথ সস্থির নিশ্বাস ফেলল. – মাকে বাসায় নিয়ে গেল পথ.. – পথ আর পার্থ বসে আছে পার্কে..কি করবে এখন..পরীর কোন দেখা নাই..মনের কথা ত বলতে পারলই না অন্য দিকে মাকে কথা দিতে হবে..চিন্তা করছে পথ.. – অন্য দিকে পার্থ চিন্তায় আছে তার বিয়ের প্রস্তাব কি মেনে নেবে নিলুর পরিবার..? – নিলু হল পার্থের অর্ধাংশ..৫ বছরের প্রেম তাদের..অনেক মধুর সম্পর্ক দু জনের..নিলুর পরাশুনা শেষ হতে এখনো ২ বছর বাকি..সেই কলেজ লাইফ থেকে পরিচয় দু জনের..প্রথম দিনেই ঝগরা..তারপর আস্তে আস্তে প্রেম. – নিলুর আজ আসার কথা পার্কে..সমস্যার একটা সমাধান করার জন্য.. – পার্থ বসে বসে ঘাস চাবাচ্ছে আর ভাবছে আর পথ আকাশ দেখছে..হটাত সামনে এসে দাড়াল নিলু.. – এই ছাগল ঘাস চাবাচ্ছ কেন.? – তুমি এসেছ এতক্ষনে..ঘাস চাবাব না ত কি করব..আমি ত তাও কিছু করছি আর ঐ দেখ আরেক জন চিন্তায় আকাশের সীমানা মাপছে.. – নিলু পথকে সালাম দিয়ে বলল ভাল আছেন ভাইয়া.? – নাহ..ভাল আর কি করে থাকি..চিন্তায় জীবন শেষ.. – নিলু দুই জনের সব কথা শুনল..তারপর পার্থকে বলল আজই বাসায় প্রস্তাব পাঠাতে..বাকি কাজ নিলু সামলে নিবে..আর পথকে বলল ভাইয়া কি আর করবেন যাকে খুজে পাওয়া যাচ্ছে না তাকে ভুলে যান..মায়ের পছন্দের মেয়েকে বিয়ে করেন.. – হুম নিলু..আমিও তাই ভাবছি..পরী বসন্ত বাতাসের মত এসে কাল বৈশাখি ঝরের মত চলে গেল..যাকে খুজে পাওয়া যাচ্ছে যাবে না তাকে মনে রেখে লাভ কি..আজই মাকে হ্যাঁ বলে দেব..আর পার্থ তুই আজই কিন্তু প্রস্তাব পাঠাবি. – পথ বাসায় এসে বসে বসে ভাবছে..তারপর এক পর্যায়ে মার কাছে যায়. – কি রে বাবু কিছু বলবি..? – হ্যাঁ..মা আমি তোমার পছন্দের মেয়েকে বিয়েতে রাজি.. – যাক অবশেষে সুবুদ্ধি হল..তা মেয়ে দেখবি না.? – নাহ..তুমি দেখেছ তাতেই হবে..তুমি মেয়ে পক্ষের সাথে কথা বল..বিয়ের দিন ঠিক করে জানাও..পার্থকে জানাতে হবে.. – পথ মায়ের রুম থেকে বেরিয়ে সোজা পার্থের বাসায় চলে এল.. – কিরে পথ বলে দিলি তাহলে..আমিও প্রস্তাব পাঠিয়েছি..ওরা রাজি হয়েছে..নিলু সব মেনেজ করে নিয়েছে..এখন তোর বিয়ের দিন ঠিক হলেই হল.. – পার্থ আমার না পরীর জন্য কেমন করছে মনটা..মনে হচ্ছে কি যেন হারিয়ে ফেলছি.. – আরে মন খারাপ করিস না পথ.যা হবার ছিল তাই হচ্ছে..চল শপিং এ যাই মন ভাল হয়ে যাবে.. – চল তাই করি..মনটা ভাল করা দরকার..তা ছারা বিয়ে ত ঠিক হয়েই গেছে..মাকে একটা ফোন করে চল বেরিয়ে পরি.. – দুই বন্ধু মিলে গেল শপিং করতে..খুব আনন্দ করছে দুই জন..অনেক শপিং করল বিয়ের..হটাৎ পিছন থেকে পরীর গলার আওয়াজ. – আরে পথ ভাই না..কেমন আছেন..?ওয়াও এত্ত শপিং করছেন..ব্যাপার কি..? – ভাল আছি না মন্দ আছি তা জেনে তুমি কি করবে..কত খুজেছি তোমাকে..কোথায় হারিয়ে গিয়েছিলে..?অবশ্ য এখন এ সব বলে আর কি লাভ.. – কেন.?লাভ নেই কেন.?আর আমি অসুস্থ ছিলাম অনেক.. – ও..থাক ভালই আছ মনে হয়..ক দিন পরে আমার বিয়ে..তাই আর পুরান কথা তুললাম না..ভাল থেক.. – ওয়াও..congratul ation অগ্রিম..আমাকে ইনভাইট করবেন না..? – কি করে করব..তোমার ত শুধু অর্ধেক নাম্বার জানি আর বাসার ঠিকানাও জানি না.. – তাও ঠিক..তাহলে আপনার নাম্বার দিন আমি বিয়ের দিন চলে আসব ফোন করে..আর বাকি ৩টা ডিজিত নিন ৬৩৪..বাকি তিনটা বিয়ের দিন গিফটে লিখে দেব.. – পথ অবাক..মেয়ে বলে কি..যাই হোক মনের মানুষ ত..পথ নিজের নাম্বারটা দিয়ে দিল.. ———– – আজ পার্থ আর পথের বিয়ে..দুই বন্ধু এক সাথে বরের সাজে সেজেছে..পার্থ অনেক খুশি কিন্তু পথের মনটা আজও খারাপ..কেন যে সে দিন পরীর সাথে দেখা হয়েছিল.. – সবাই এসে গেছে বিয়েও শেষ..পথের বিয়ে হল মেঘ নামের এক অজানা অদেখা মেয়ের সাথে..আর পার্থর হল নিলুর সাথে.. – সবাই চলে যাচ্ছে..অনুষ্ঠা ন শেষ..পথ এখনো অপেক্ষা করছে পরীর জন্য..শেষ দেখাটা অন্তত দেখার জন্য..কিন্তু পরী যে আসে না.. – বাসর রাত আজ পথের..অদেখা আর অচেনা এক মেয়ের সাথে যাকে সে এখনো দেখেনি.. – রুমে ঢুকতেই মেঘ একটা গিফট এগিয়ে দিল পথকে..বড় ঘোমটা থাকার কারনে চেহারাটা দেখতে পেল না পথ.. – গিফটা নিয়ে খুলতেই.. – সেখানে লেখা বাকি তিনটা ডিজিট দিলাম মন চাইলে কল কর নইলে বিছানায় আস.. – পথ অবাক হয়ে চেয়ে আছে লেখাটার দিকে..তাহলে এই কি আমার পরী..? – দেরি না করে ঘোমটা তুলতেই সেই চির চেনা মুখটা দেখতে পেল পথ..এই ত আমার পরী.. – কি অবাক হলেন.?খুজে পেলেন আপনার পরীকে.. – তুমি কেন..?আমার ত মেঘের সাথে বিয়ে হয়েছে..মেঘ কোথায়..? – আমিই মেঘ..মেঘ জান্নাত পরী..এখন বলেন পরীকে ভালবাসেন না মেঘকে.?কার সাথে সংসার করবেন..? – উত্তরে একটাই নাম আসে পরী..আমি তোমাকে ভালবাসি পরী..অনেক ভালবাসি.. – আর কিছু দিন পর বললে হয়ত আমাদের বাচ্চারাও শুনতে পারত..তা কেমন লাগল সারপ্রাইজ..সবই ছিল প্লান করা..আমার শাশুরি আম্মা আর আমি দুজনে মিলেই এই প্লান করেছি… – ওও…আর আমি কষ্টে মরে যাচ্ছিলাম তার দিকে খেয়াল নাই.. – খেয়াল আছে বলেই ত রোজ খোজ নিতাম আপনার.. – তা আপনি করেই বলবে না তুমি করে.. – আমার না লজ্জা লাগছে এখন.. – ওরে আমার লজ্জাবতিরে.. এভাবেই খুনসুটি আর গল্পে কেটে যাচ্ছিল দুই ভালবাসার পাখির দিনগুলো… …..ছোট সে ঘরে জায়গা দিলাম ……মনের দুয়ার খুলে, ……বাসবে কি ভাল এমন করে ……সারা জীবন ধরে =একবার যখন ধরেছি হাত =ছারব না কভু =তুমিও আমায় তেমনই বেস =যেমনটা বেসেছিল এই হৃদয়..
কনকনে শীত । ঘন কুয়াশায় ঘেরা চারপাশ , একটু দুরেই বাঁধা পড়ে দৃষ্টি । তারপর আবার কুয়াশা । গাঢ় , সাদা কুয়াশা ।
. হ র র র . . হট . . হট . . দশটি রুগ্ন পা একসাথে একই ছন্দে চলছে । সেই সাথে চলছে রূপালী লাঙল , চলছে জীবনের লাঙল . . . . গরু দুটোর স্বাস্থ্যের অবস্থা খুব খারাপ , যতটা ওদের মালিকের । কেমন ঠকঠক করে কাঁপছে ওরা , যেমনটা কাঁপছে ওদের মালিকও । ওদের গায়ে যেমন কোন কাপড় নেই , তেমনি ওদের মালিকের শরীরও প্রায় পুরোটাই খালি । পরনে একটা ছেড়া গামছা চাড়া আর কিছুই নেই । . কলিম শেখের সম্বল বলতে এই দুটো গাই গরু , আর এক টুকরো আবাদি জমি । মাঝেমাঝে গরু দুটোর জন্য তার খুব মন খারাপ হয় । গরু দুটোর জীর্নশীর্ন শরীর দেখলে খুব মায়া লাগে । কলিম শেখের ধারনা তার শরীর দেখে গরু দুটোরও হয়ত মন খারাপ হয় , মায়া হয় । মুখে হয়ত ওরা কিছুই বলতে পারে না , কিন্তু মাঝেমাঝে কেমন যেন মলিন দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে থাকে ওরা ! . কিরে ! গায়ে জোর নাই ! খাড়াইলি কেন ? চল চল , টান লাগা . . হ র র র . . হট . . হট . . কলিম শেখ গরু দুটোর সাথে অনবরত কথা বলে যাচ্ছে , আর গরু দুটো হাল টেনে চলেছে বিরামহীন । লাঙলের পলায় জমির বুক চিড়ে খন্ড বিখন্ড হয়ে যাচ্ছে । কলিম শেখ বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে খন্ডিত মাটির টুকরোগুলোর দিকে । এ যেন মাটি নয় , এক এক টুকরো স্বপ্ন । ধোঁয়াতোলা ধবধবে সাদা ভাতের স্বপ্ন . . . . . কলিম শেখের দুই ছেলে , দুই মেয়ে । ছেলে দুটো বিয়ে করে আলাদা হয়ে গেছে । আর মেয়ে দুটোরও বিয়ে হয়ে গেছে সেই কবে । . অনেক , অনেকদিন আগে বাবা রজব শেখ কলিমের হাতে তুলে দিয়েছিলেন এই লাঙল- জোয়াল । তখন কলিমের বয়স বার কি তের হবে । দীর্ঘ এতগুলো বছর কলিম শেখ সেই লাঙ্গল-জোয়ালের ভার বহন করে চলেছেন । জীবনের এই পড়ন্ত বেলায় এসেও এতটুকু বিশ্রাম নেই , এতটুকু ক্লান্তি নেই । ক্লান্তি হয়ত আছে , কিন্তু সেটা মেনে নিতে তিনি একেবারেই নারাজ । তাইতো আজও শক্ত হাতে ধরে রেখেছেন জীবনলাঙলের হাতল . . . . . ছেলে-মেয়েরা চেড়ে গেলে কি হবে , একজন কিন্তু এখনো চেড়ে যায় নি কলিম শেখকে । যাকে তিনি পষ্ণাশ বছর আগে পেয়েছিলেন কোন এক ঝড়ের রাতে । সেই রাতের কথা কলিম শেখের স্মৃতিতে আজও উজ্জল , যেন এই সেদিনের কথা . . . . . কলিম শেখের বয়স তখন ষোল কি সতের । কি যেন এক কঠিন রোগে আক্রান্ত হলেন রজব শেখ । বাঁচার কোন আশা নেই আর । একদিন রাতে তিনি সবাইকে ডেকে বললেন , আজ রাতেই তার সময় শেষ । মৃত্যুর আগে তিনি ছেলের বউয়ের মুখ দেখতে চান । তাই তাড়াহুড়ো করে সেই রাতেই কলিম শেখের বিয়ে দেয়া হয় পাশের গ্রামের “নছিমন বেওয়া ” এর সাথে । নছিমনের গায়ের রং কিছুটা কালো ছিল । তাই বাসর রাতে নছিমনকে দেখে কলিম শেখের মুখটাও কিছুটা কালো হয়ে গেল । ততক্ষনে বাহিরের আকাশটাও কালো হয়ে গিয়েছিল হয়ত । শুরু হল প্রচন্ড ঝড় । ভোর রাতের দিকে ঝড় থেমে গেল , সেই সাথে থেমে গেল রজব শেখের জীবন প্রদীপও । কি অদ্ভুত ব্যাপার ! লোকটা আগেই টের পেয়ে গিয়েছিল তার মৃত্যুর কথা ! . হ র র র . . হট . . হট . . কলিমের চোখে পানি । অস্ফুট স্বরে তিনি বলে উঠলেন , কেমন আছেন আব্বা . . তারপর উত্তর দিকের ঐ ঝোপঝাড় ঘেরা পুকুর পাড়টার দিকে তাকালেন । সেখানেই ঘুমিয়ে আছেন রজব শেখ গত পষ্ণাশ বছর ধরে . . . . . দীর্ঘ এই জীবনে কলিম শেখ অনেক কিছুই হারিয়েছেন , অনেকেই তাকে চেড়ে চলে গেছে । কিন্তু সেই কালো মেয়েটি আজো রয়ে গেছে তার পাশে । কলিম শেখ এবার হাল চেড়ে বসে পড়লেন । কুয়াশা তাকে চারপাশ থেকে ঘিরে ধরেছে যেন । কলিম শেখ জানেন নছিমন আর বেশী দিন থাকবে না তার সাথে , যে কোন সময় চলে যেতে পারে ওপারের ঠিকানায় । গত পষ্ণাশ বছর ধরে এই কালো মেয়েটাই তার জীবনকে আলোকিত করে রেখেছিল , সেই আলো আজ নিভু নিভু । . কলিম শেখ ভেবেই পায় না , কিভাবে নছিমন বিহীন দিনগুলো কাটবে তার । প্রতিদিন সকালে কে ঘুম ভাঙিয়ে দেবে ? কে পানের খিলি বানিয়ে দেবে ? কাজ থেকে ফেরার পর কে শাড়ির আঁচলে ঘাম মুছে দেবে ? কে তালপাতার পাখায় ক্লান্তিহীন বাতাস করে যাবে ? জোছনা রাতে কে চাঁদের বুড়ির গল্প শুনাবে ? ঘুম না আসলে কে মাথায় বিনি কেটে দেবে ? ঝড়ের রাতে যখন বাবার কথা মনে পড়বে , তখন কে তাকে সান্তনা দেবে ? . নছিমনকে চাড়া একটি মুহুর্তও কল্পনা করতে পারেন না কলিম শেখ । সেই নছিমন আজ ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে চলেছে , অথচ তার কিছুই করার নেই . . . . . কলিম শেখ ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগলেন . . গাই দুটো ঘাড় বাকা করে তাকিয়ে আছে তার দিকে । কি অদ্ভুত ব্যাপার ! গাই দুটোর চোখগুলোও কেমন ভেজা . . ! ! . ঐতো সূর্য উঠে গেছে । কুয়াশা কাটতে শুরু করেছে । নরম রোদে চারপাশটা উজ্জল হয়ে উঠছে ধীরে ধীরে । কলিম শেখও উঠে দাড়ালেন সত্তর ছুঁইছুঁই জরাজীর্ন এক শরীর নিয়ে । মাটির টুকরোয় জমে থাকা ফোঁটায় ফোঁটায় শিশির বিন্দুগুলো শুকাতে শুরু করেছে ধীরে ধীরে । শুকাতে শুরু করেছে কোঠরে লুকিয়ে থাকা কলিম শেখের অশ্রুসিক্ত ছোট্ট ছোট্ট চোখ দুটোও । . হ র র র . . হট . . হট . . স্বপ্ন কখনো মরে না , কখনো থেমে থাকে না । গরু দুটোর কাঁধে ভর দিয়ে এগিয়ে চলেছে জোয়াল , লাঙল । সেই সাথে এগিয়ে চলেছে কলিম শেখের স্বপ্ন । নছিমনকে নিয়ে আরও অনেক দিন বেঁচে থাকার স্বপ্ন . . . .