জ্যাক মা বা মা ইয়ান একজন চাইনিজ উদ্যোক্তা। জনপ্রিয় ই-কমার্স সাইট আলিবাবা ডট কমের ফাউন্ডার। হাজার হাজার তরুন উদ্যোক্তাদের আইডল। ফোর্বস ম্যাগাজিনের তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে বিশ্বের ২৬ তম ধনী ব্যক্তি তিনি। তার বর্তমান সম্পদের পরিমান ২৭ বিলিয়ন ডলার এর উপর।

পরিশ্রমকারী ব্যক্তি কখনও ব্যর্থ হয়না, কোন না কোন রাস্তা তার জন্য খুলে যায় একদিন। বিল গেটস থেকে শুরু করে বড় বড় ব্যক্তিরা আজকের এ অবস্থানে আসতে পেরেছেন, শুধুমাত্র নিজেদের পরিশ্রমের কারনে।জনপ্রিয় ট্রেডিং সাইট Alibaba.Com এর কর্ণধার এবং চীনা কোটিপতি জ্যাক মার গল্পটাও সেরকম। জ্যাক মাকে না চিনলেও Alibaba.Com চিনেনা, এরকম মানুষ কম পাওয়া যাবে। এ জ্যাক মা এখনকার অবস্থানে কখনও ছিলেননা। উনার আজকের এ উথ্থানটাই হয়েছে Alibaba.Com এর মাধ্যমে। যখন উনি এ ওয়েবসাইট নিয়ে ভাবেন, তখন চীনের ইন্টারনেট এত বেশি ব্যবহৃত হত না। সেই দেশে বসে এধরনের ওয়েবসাইটের কল্পনা করাটাও আসলে তখন অনেক রিস্কের ছিল।

জ্যাক মা যুব সমাজের জন্য, যারা নিজেরা কিছু একটা করে দেখাতে চায়, তাদের জন্য কয়েকটি উক্তি করেন –
১। আপনার দরিদ্র হয়ে জন্মানোটা দোষের না কিন্তু দরিদ্র হয়ে থাকাটাই দোষের।

২। আপনি যদি একটি দরিদ্র ঘরে জন্ম নিয়ে নিজের ৩৫ বছর বয়সেও সেই দরিদ্রই থাকেন তবে দরিদ্র হয়ে থাকাটা আপনার কপালের দোষ নয়, আপনি এটি প্রত্যাশা করেন। কারন আপনি আপনার যুবক বয়সকে কোন কাজে লাগাতে পারেন নি, আপনি সম্পূর্ণ ভাবে সময়টা নষ্ট করে দিয়েছেন।

৩।জীবনে অনেক উপরে উঠতে হলে ২৫ বছর থেকেই শুরু করুন, নিজে পরিকল্পনা করুন, তাই করুন যা আপনি উপভোগ করতে জানেন।

৪।এগিয়ে যাও তা না হলে ঘরে ফিরে যাও।

৫।গরীব কারণ আপনার দূরদর্শিতার অভাব।

৬।আপনার দারিদ্রতা কারণ আপনি আপনার ভীরুতাকে জয় করতে পারেন নি।

৭।গরীব কারণ আপনি আপনার সর্বোচ্চ ক্ষমতা, ব্যবহার করতে পারেন নি।

৮।আপনি দরিদ্র তাই সবাই আফসোস করবে কেউই আপনাকে সচ্ছল বানিয়ে দিবেনা।

৯। যখন আপনার বাবা মায়ের চিকিৎসা ব্যয় আপনি মিটাতে পারবেন না কেউই আপনাকে তা দিবেন না।

১০।নিজের জন্য নিজেকেই এগিয়ে আসতে হবে। চিন্তা করতে হবে, ভাবনার সাথে প্রয়গিক বাস্তবতার সন্নিবেসন ঘটাতে হবে। জ্যাক মা আরো বলেন, অনেকেই হতাশ হয়ে যায়।

১১।যখন আমাদের টাকা থাকে তখন আমরা ভুল করা শুরু করি।

১২।তুমি যদি হাল ছেড়ে না দাও তবে এখনো তোমার সুযোগ আছে। হাল ছেড়ে দেওয়াটাই সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা।

১৩।কখনো কোনদিন সরকারের সাথে ব্যবসা করো না। তাদের সাথে ভালোবাসা রেখো কিন্তু বিয়ে করো না।

১৪।আমি নিজেকে সবসময় আনন্দিত রাখতে চেষ্টা করি। কারণ আমি জানি যদি আমি খুশি না থাকি তবে আমার সহকর্মী,অংশীদার ও ক্রেতারাও খুশি থাকবে না।

সংগ্রীত ঃ

http://www.kormojibon.com/মতামত/ফিচার/389/পরিশ্রমকারী-ব্যক্তি-কখনও-ব্যর্থ-হয়না-কোন-না-কোন-রাস্তা-তার-জন্য-খুলে-যায়-একদিন।-


কলেজে থাকাকালীন তোমার সাথে আমার প্রথম দেখা। জানিনা কেন তোমাকে আমার তখন এতটুকুও ভাল লাগত না। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ক্লাসে তোমাকে দেখার সাথে সাথে মনে হয়েছিল, উফ! এ মেয়েটি এখানে কেন? না চাওয়া স্বত্বেও যাওয়া আসা তোমার সাথেই করতে হত। এরপর হয়তো কোন এক প্রয়োজনে তোমার সাথে আমার প্রথম কথা বলা। ধীরে ধীরে জানতে শুরু করি তোমার মাঝে লুকিয়ে থাকা সুপ্ত তোমাকে । তোমার সবকিছুতেই যেন ছিল হাসি জড়ানো। কষ্টের মাঝেও তোমার সেই ঝলক মার্কা হাসি যেন থাকবেই। তোমার সেই দুরন্তপনা, স্বচ্ছতা সবই যেন আমাকে আকৃষ্ট করেছিল। তোমাকে বিরক্ত করলে তুমি যে চেহারাটা বানাতে তা যেন আজও আমার চোখে ভাসে। ভাবতেই হাসি পায়। কেমন অবুঝের মতই না প্রতিটি কথায় তুমি অভিমান করতে। তোমার প্রতিটি জিনিসই তোমার দিকে আমাকে আরো ঝুঁকিয়ে তোলে। তখন কলেজ জীবনের কথা মনে পড়লেই মনে অজান্তেই কেন জানি হেসে উঠতাম। তুমিও হাসতে।
 তোমার মনে আছে, শেষ বারের মত যখন আমরা একসাথে বাড়ি ফিরছিলাম সে রাতটির কথা? কেন জানি জোর করেই তুমি বসেছিলে জানালার পাশের সিটটাতে। তোমার এসব কারণ ছাড়া জেদের কথা মনে পড়লে আজও হেসে উঠি। তুমি কি জানো আমি তখন মনে মনে তোমাকে সেই কথাটি বলার জন্যই প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম যে কথাটি শোনার জন্য তুমি অধীর আগ্রহে এতদিন অপেক্ষা করছিলে ? হ্যাঁ… আজো তোমাকে বলা হয়ে উঠেনি আমার মনের সেসব কথা। সত্যি কথা কি জান? তোমাকে যখন অনেক কাছ থেকে চিনতে শুরু করি, তখন তোমাকে ভাল না বেসে যেন পারিনি। অনেক আগেই তোমাকে বলতে চেয়েছিলাম এসব। কিন্তু বলব বলব করেও বলা হয়নি। ভয় পেতাম। যদি কথাগুলো শোনার পর আমার সঙ্গ, আমার বন্ধুত্বও তোমার কাছে অসহ্য মনে হয়… আমি অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছিলাম তোমার সান্নিধ্যে। আজো আছি।

তোমাকে বলার জন্য সবে মাত্র মুখটা খুলেছিলাম আর তুমি কেন জানি “আদিত্য” বলে আর্তচিৎকার করে আমাকে সজোরে ধাক্কা মেরে দূরে সরিয়ে দিলে। অবাক হয়েছিলাম আমি অনেক তখন। কিছুটা রেগেও গিয়েছিলাম। কিন্তু তোমার চোখের সেই ভয় আজো আমাকে কাঁদায়। তুমি কি বুঝতে পেরেছিলে কি হতে যাচ্ছে? জানই তো, তোমার চোখের পানি আমার সহ্য হয়না। কিন্তু কয়েক সেকেন্ডের জন্য মনে হয়েছিল তুমি অনেক কেঁদেছ। কিছু একটা নিয়ে অনেক ভয় পেয়েছিলে। কি ছিল সেটা? কেন তুমি আমাকে এভাবে দূরে ঠেলে দিয়েছিলে? কিভাবে তুমি পারলে? এরপর তুমি আমার সাথে আর যোগাযোগ করনি। নতুন কেউ কি এসেছিল তোমার জীবনে যার কারণে তুমি আমাকে এভাবে ভুলে গেলে? না না না। তা হয়না। কিন্তু এ ছয় মাস তোমার কি একটা বারের জন্যও আমাকে মনে পড়েনি? কখন ভাবতেও পারিনি তুমি এমন করবে। অনেক রেগে আছি তোমার উপর। ক্যাম্পাসে আমরা কত মজাই না করতাম একসাথে। তোমাকে ঘিরে কত স্বপ্ন দেখেছিলাম। মনে আছে তোমার?
তুমিতো কোন খবরই রাখনি, সেদিন আমাকে সরিয়ে দেয়ার পর কি হয়েছিল ? আমার অনেক কিছুই মনে নেই। পরদিন শুনলাম আমাদের বাসটি নাকি একটি খাদে পরে গিয়েছিল। বেপরোয়া চালায় বলে তুমি কখনও এধরনের বাসে উঠতে চাইতেনা। আসলে তুমিই ঠিক ছিলে। এখন বুঝতে পারি। তোমার কথা শোনা উচিত ছিল । সে রাতে সবাই মোটামুটি আহত হয়েছিল। আমার তো বলতে গেলে কিছুই হয়নি। শুধু মাথা একটু ফেটে গিয়েছিল। ফাটবেনা ? তুমি যে জোরে ধাক্কাটা না দিয়েছিলে। তোমার গায়ে তখন এত শক্তি কোথা থেকে এল ভেবে আমি এখনও অবাক হই। শুনেছিলাম ঐ রাতে নাকি একটা মেয়ে মারা গিয়েছিল। আমি দেখতে গিয়েছিলাম তাকে। সাদা কাপড়ে জড়ানো ছিল তার দেহ। কিন্তু আম্মা কেন জানি আমাকে তার কাছে যেতেই দেয়নি। মা দের এধরনের অযথা জেদ দেখলেই রাগ লাগে। শুধু চুল গুলো দেখেছিলাম। তোমার মতই লম্বা চুল ছিল মেয়েটির। অনেক চিন্তিত ছিলাম আমি তোমাকে নিয়ে। তারপর আরো কত কিছু হয়ে গেল। তুমি তো একটি বারের জন্যও খবর নাওনি। আচ্ছা, এটা নিয়ে পরে ঝগড়া করব। আগে সব কথা শেষ করি।
জানো আমাকে ওরা এ ছয়মাস কোথায় রেখেছিল? হাসপাতালের একটি বন্ধ কক্ষে। আশেপাশের সবাই ছিল অসুস্থ। সাদা কাপড় পরা ওই লোকগুলো মাঝে মাঝে নিজে নিজেরাই হাসে, কথা বলে। মায়া হচ্ছিল তাদের দেখে। এসব জিনিস সবসময় তোমাকে আবেগাপ্লুত করে তুলত। তোমার সাহচর্য আমাকে অনেকটা তোমার মতই বানিয়ে দিয়েছিল। বাসার কথা খুব মনে পড়তো। যেতে চেয়েছিলাম আমি বাসায় অনেকবার। তোমার খবরও তো নিতে হবে আমাকে। জানো, চুপি চুপি তোলা তোমার অনেক ছবি ছিল আমার কাছে। কিন্তু তোমার সব স্মৃতি, সব ছবি ওরা কোথায় জানি লুকিয়ে ফেললো। খুঁজেই পাইনা। কিন্তু ওরা জানে না, আমার সাথে এখনো তুমি আছ। লুকিয়ে রেখেছি তোমার একটি ছবি যেটা আমার পকেটে লুকানো ছিল। আর কিছুই নেই তোমার আমার কাছে এখন। শুধু ওই একটি ছবি।
আজকে আমি আবার বাসে করে বাড়ি যাচ্ছি। আমাকে দেখলে এখন তুমি অনেক খুশি হতে। তোমার পছন্দ করা সেই শার্টটি পরেছি আজ। কিন্তু আমার পাশে আর তুমি নেই আজ। অনেক মনে পরছে তোমাকে। তোমাকে যে অনেকগুলো কথা বলা হয়নি, তোমার ছবিটা এইতো পকেটেই ছিল আমার। [মনের অজান্তেই পকেট হাতড়াতে থাকে] আহহহহ! পেয়েছি! তুমি কি এখনও আগের মতই আছো? নাকি আরেকটু মুটিয়ে গিয়েছো? বেশি করে খাওয়া উচিত তোমার। আরেকটু মোটা হলে তোমাকে যেন আরো বেশি সুন্দর দেখাতো। আচ্ছা তোমার চুল কি আরো লম্বা হয়েছে? অনেক পছন্দ তোমার চুলগুলো আমার। যত্ন নিও।
জানিনা কেন বাসটি থেমে গেল? ওহ হ্যাঁ! পৌঁছে গিয়েছি মনে হয়। কিন্তু কোথায় থামাল? এইটা কি আমার বাসা? চিনতে পারছি না তো! নাহ, এইখানে নামবো না। তোমাকে বলার আমার আরও অনেক কথা আছে। আসল কথাটাই তো বলা হয়নি। এই যে ভাই। শুনেন। আমি এখানে নামবো না! আপনারা আমাকে কোথায় নিয়ে এসেছেন? আশ্চর্য। আপনারা আমার কথার জবাব দিচ্ছেন না কেন? ছি! এইভাবে টানছেন কেন আমাকে? দেখেন ভাই, বেশি হচ্ছে কিন্তু! এগুলো কিন্তু অভদ্রতা।
[ টানা – হেঁচড়ার কারনে বেকায়দায় বাস থেকে পড়ে যায় সে। হাতের ছবিটি যেয়ে পড়ে তার থেকে কিছু দূরে। ছবিটির উপর দিয়ে হেঁটে যায় যাত্রীরা। ] লাবণ্য………….. আমি বুঝতে পারছিনা লোকগুলো আমার সাথে এমন কেন করছে? এই যে ভাই, কি করছেন? আমি যাবো না বললাম তো আপনাদের সাথে। সমস্যা কি আপনাদের? এই যে! আপনারা আমাকে এইভাবে আঁকড়ে ধরেছেন কেন? কারা আপনারা? আমি কি চিনি আপনাদের? [ ইনজেকশনটা দেওয়ার পর ধীরে ধীরে নিস্তেজ হতে থাকে সে। তাকিয়ে থাকে দূরে পড়ে থাকা সেই ছবিটির দিকে। অস্পষ্ট স্বরে বলে উঠে ]
“ভালবাসি !”

‘আমি তোমাকে ভালোবাসি’-এ তিনটি শব্দে কেউ আপনার প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করলেও তা কি সত্যিকার ভালোবাসা ? অনেকেই অভিযোগ করেন, ‘এ পৃথিবীতে কেউ আমাকে ভালোবাসে না’। সত্যিকার অর্থেই সে আপনাকে ভালোবাসে কি না, তা নিয়ে চিন্তিত ? তাহলে এ লেখায় দেওয়া সাতটি পয়েন্ট মিলিয়ে নিন। বুঝে নিন, সে আপনাকে সত্যিকার অর্থে ভালোবাসে কি না।



১. অসুস্থ হলে আপনার খবর রাখে

আপনার প্রতি তার ভালোবাসা আছে, এ বিষয়টি বোঝার অন্যতম উপায় হলো আপনি অসুস্থ হলে সে আপনার খবর নেবে। এ সময় আপনার যে কোনো প্রয়োজনে তাকে ডাকলে কাছে পাবেন। আপনার দুঃসময়ে তার এগিয়ে আসা দেখেই বুঝে নেবেন, সে আপনাকে ভালোবাসে।

২. আপনাকে রক্ষা করে

যে আপনাকে ভালোবাসে সে সব সময় আপনাকে নানা প্রতিকূল পরিস্থিতি থেকে রক্ষা করবে। আপনাকে নিয়ে কেউ হাসাহাসি করলে সে তাতে অংশ নেবে না, বরং তাদের বিরুদ্ধেই থাকবে। এমনকি আপনি তার কাছ থেকে সাহায্য না চাইলেও সে আপনার সাহায্যে এগিয়ে আসবে।

৩. আপনার পরিবারকে সম্মান করে

আপনার পরিবার আপনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আর আপনাকে যে ভালোবাসে সে আপনার পরিবারকেও সম্মান করবে। আপনার বাবা-মা কিংবা ভাই-বোনকে সে সম্মান করবে। তাদের সঙ্গে যদি কথা বলতে হয় তাহলে সে অতি সম্মানের সঙ্গে তা করবে।

৪. আপনাকে উৎসাহ দেয়

আপনাকে যে ভালোবাসে সে আপনার নানা অর্জন দেখে খুশি হবে এবং আরও অর্জনে আপনাকে উৎসাহিত করবে। আপনি তাকে পেছনে ফেলে এগিয়ে যাচ্ছেন, এ জন্য সে মোটেও দুঃখ পাবে না। তার বদলে সে আপনার অর্জনে সহায়তা দিতে এগিয়ে আসবে এবং সে জন্য গর্ববোধ করবে।

৫. ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করে

আপনার সঙ্গে জড়িয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করতে কেউ কি এগিয়ে এসেছে? যদি এগিয়ে আসে তাহলে বুঝে নিন, সে আপনার প্রতি দুর্বল, আপনাকে ভালোবাসে এবং আপনার সঙ্গে জীবন অতিবাহিত করতে চায়।

৬. আপনার মতামতের মূল্য দেয়

যে আপনাকে ভালোবাসে সে আপনার মতামতেরও মূল্য দেয়। আপনার কথা সে সময় নিয়ে শুনবে এবং সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করবে। যদি কেউ আপনার মতামতকে মূল্য না দেয় তাহলে এর বিপরীত অবস্থা হবে। কিন্তু আপনাকে যদি ভালোবাসে তাহলে সে আপনাকে একজন বুদ্ধিমান বলেই মনে করবে।

৭. মনে রাখে

যে আপনাকে ভালোবাসে সে আপনার জন্মদিনসহ নানা তারিখের কথা খেয়াল রাখবে। এ ছাড়া অন্য নানা উপলক্ষেও সে আপনাকে অভিনন্দন জানাতে ভুলবে না। (ইত্যাদি)


শৈশবে এক মেঘবালিকার দেখা পেয়েছিলাম।
মেঘে মেঘে ছুটে বেড়াত মেঘবালিকা।
আমাকেও ভাসিয়ে নিয়ে যেত সেই মেঘের দেশে।
এ যেন অন্যজগত চারিদিকে ফেনা ফেনা মেঘ, যেন স্বপ্নের এক দেশ।

শৈশব-কৈশোর পেরিয়ে আমি এখন যৌবনে,
মেঘবালিকাও আর আগের মত নেই,
সবাই তাকে এখন বৃষ্টি বলেই জানে।
আমার হৃদয় যখন খরতাপে উতপ্ত,
ঠিক তখন বৃষ্টি তার শীতল পরশে আমায় ভিজিয়ে দিত।
সে কি বৃষ্টি! উন্মাতাল এলোমেলো বৃষ্টি!!!
আহা!! কি যে সুখ!!!

শ্রাবণের অঝোর বৃষ্টি এবার বর্ষা রূপে দেখা দিল!
বর্ষার অবিরাম বর্ষণে সব কিছু ভিজে একাকার.........
সময় সময় ভাবতাম, আহ!!! বর্ষা! এবার শান্ত হও।
কিন্তু বর্ষা শান্ত হয়নি, থামেনি সে.........

এখন তার নাম বন্যা!!!!
বানের জলে আমায় ভাসিয়ে নিয়ে এসেছে শুনশান এক নিঃসঙ্গ দ্বীপে।
যেখানে আমার সঙ্গী শরতের নীল আকাশ, আর সাগরের নীল রঙ।
নীলে নীলে আমিও নীল হয়ে তবু জীবিত।

মেঘবালিকা-বৃষ্টি-বর্ষা-বন্যা যে নামেই ডাকি, কেউ নেই এখন।
অতঃপর সে এখন নারী!!!!
তার স্বপ্নলোকে বসৎ করে ভীন রাজ্যের রাজপুত্র,
যে তার ইচ্ছা আকাঙ্খাগুলোকে সোনায় মূরিয়ে দেবে!

জানি আমি তোমার দু’চোখ আজ
আমাকে খোঁজেনা আর পৃথিবীর’ পরে-
বলে চুপে থামলাম, কেবলি অশত্থ
পাতা পড়ে আছে ঘাসের
ভিতরে শুকনো মিয়োনো ছেঁড়া;- অঘ্রান
এসেছে আজপৃথিবীর বনে;
সে সবের ঢের আগে আমাদের দুজনের মনে হেমন্ত
এসেছে তবু; বললে সে, ‘ঘাসের ওপরে সব
বিছানো পাতার
মুখে এই নিস্তব্ধতা কেমন যে-
সন্ধ্যারআবছা অন্ধকার
ছড়িয়ে পড়েছে জলে; কিছুক্ষণ অঘ্রাণের অস্পষ্ট
জগতে হাঁটলাম, চিল উড়ে চলে গেছে-কুয়াশার প্রান্তরের
পথে
দু-একটা সজারুর আসা-যাওয়া; উচ্ছল
কলারঝড়ে উড়ে চুপে সন্ধ্যার
বাতাসে লক্ষ্মীপেঁচা হিজলের ফাঁক দিয়ে বাবলার
আঁধার গলিতে নেমে আসে;
আমাদের জীবনের অনেক অতীত
ব্যাপ্তি আজো যেন
লেগে আছে বহতা পাখায়
ঐ সব পাখিদের ঐ সব দূর দূর ধানক্ষেতে,
ছাতকুড়োমাখা ক্লান্ত জামের শাখায়;
নীলচে ঘাসের ফুলে ফড়িঙের হৃদয়ের
মতো নীরবতা ছড়িয়ে রয়েছে এই
প্রান্তরে বুকে আজ…… হেঁটে চলি…..
আজ কোনো কথা
নেই আর আমাদের; মাঠের কিনারে ঢের
ঝরা ঝাউফল
পড়ে আছে; খড়কুটো উড়ে এসে লেগে আছে শড়ির
ভিতরে,
সজনে পাতার গুঁড়ি চুলে বেঁধে গিয়ে নড়ে-চড়ে;
পতঙ্গ পালক্ জল-চারি দিকে সূর্যের
উজ্জ্বলতা নাশ;
আলোয়ার মতো ওই
ধানগুলো নড়ে শূন্যে কী রকম অবাধ আকাশ
হয়ে যায়; সময়ও অপার-তাকে প্রেম আশা চেতনার কণা
ধরে আছে বলে সে-ও সনাতন;-কিন্তু এই ব্যর্থ
ধারণা
সরিয়ে মেয়েটি তাঁর আঁচলের
চোরাকাঁটা বেছে প্রান্তর নক্ষত্র নদী আকাশের
থেকে সরে গেছে যেই স্পষ্ট নির্লিপ্তিতে-তাই-ই
ঠিক;- ওখানে সিগ্ধ হয়
সব।
অপ্রেমে বা প্রেমে নয়- নিখিলের বৃক্ষ নিজ
বিকাশে নীরব।



ছোট্ট একটা ঘর আমার
ছোট্ট একটা মন।
সেই ঘরেতে বাস করে
আমার প্রিয় জন..
ছোট্ট দুটি আখি তার
ছোট ছোট পা
তাই দেখে উরে গেল
আমার পরান টা…
– অবসর সময়ে দু
একটা কবিতা লেখে পথ..চাকরি করার পর
সময় মেলেই না..একটা প্রাইভেট
কম্পানীতে ছোট খাট একটা জব করে..সকাল
৭.৩০ সময় বাসা থেকে বের হয় পথ..বাস
স্ট্যান্ডে দাড়িয়ে থাকে বাসের জন্য..এই
সময়টা অনেক ব্যস্ত থাকে নগরী..সবাই যার
যার কাজের গন্তব্যে যাওয়ার জন্য
ব্যস্ত..অনেক কষ্ট করে বাসে উঠতে হয়..তাও
আবার দাড়িয়ে থাকতে হয় অনেক সময়.
– প্রায় প্রতিদিন এমনই
হয়..স্ট্যান্ডে অনেকেই
দাড়িয়ে থাকে..কিন্তু পথের নজর
কারে একটা মেয়ে..প্রতিদিন বাসের জন্য
অপেক্ষা করে..মনে হয় স্টুডেন্ট
হবে..হাতে বই থাকে সব সময়..
– পথ প্রতিদিন লক্ষ
করে মেয়েটাকে..কিন্ত ু সময়ের
অভাবে কথা বলা হয় না..
– মেয়েটা লক্ষ করে কিনা কে জানে.?
– প্রতিদিনের মত অফিস থেকে ফিরে রেস্ট
নিচ্ছে পথ..আর মনে মনে ভাবছে মেয়েটার
কথা..
– রেহানা বেগম পথের রুমে আসলেন..পথের
মা ইনি..বাবা পথ অনেক ত বয়স হল এবার
একটা বউ নিয়ে আয় ঘরে..দেখ আমার
অবস্থাও ভাল না..কত দিন আর
বাঁচব..যাওয়ার আগে তোর সুখের
সংসারটা দেখে যেতে চাই..
– মা তুমি এভাবে বলছ
কেন..তুমি যদি এভাবে বল
তাহলে আমি কি সইতে পারি.?
– তাহলে এবার বিয়ের জন্য মত
দে..আমি একটা মেয়ে দেখেছি তোর জন্য..তুই
হ্যাঁ বললেই পাকা কথা বলব..
– মা আমাকে আর ১০ দিন সময়
দেও..আমি একটু ভেবে দেখি..
– আচ্ছা ভেবে দেখ..তবে ১০ দিনের
বেশি সময় দিতে পারব না..
– তাতেই হবে..
– ফ্রেস হয়ে টেবিলে আয়..আমি খাবার
দিচ্ছি..
– রাতের খাবার খেয়ে পথ বিছানায়
শুয়ে ভাবছে মেয়েটার কথা..কাল ত শুক্রু
বার,ছুটির দিন.মেয়েটার
সাথে দেখা হবে না..মনটা খারাপ
হয়ে গেল পথের..
– পরের দিন সকাল ১০টায় ঘুম ভাঙল
পথের..বিছানা থেকে উঠে নাস্তা করল..তারপর
বসল টিভি দেখতে..সপ্তাহে দুই দিন একটু
টিভি দেখার সময় হয়..
– পথ জুম্মার নামাজ পরে বাসায়
এসে খাওয়া দাওয়া সেরে রেস্ট
নিচ্ছে..চিন্তা করছে বিকেলের
সময়টা কি করবে..?হটাত মনে পরল অনেক
দিন পার্কে গিয়ে সূর্য ডোবা দেখা হয় না..
– পথ পার্কে বসে আছে এক
কর্নারে..আশে পাশে অনেক মানুষ
ঘুরতে এসেছে..সবাই অনেক হাসি খুশি..পথ
দেখল একটা মেয়ে তার
দিকে আসছে..অনেকটা পরিচিত
লাগছে..খানিকটা কাছে আসতেই পথ
চিনে ফেলল মেয়েটাকে..এ যে সেই বাস
স্ট্যান্ডের মেয়েটা..
– পথ অনেক খুশি..যাক আজকেও
দেখা হয়ে গেল..আজ
কি বলে দেবে মেয়েটাকে যে,তাকে অনেক
পছন্দ আমার..
– মেয়েটা পথের
সামনে এসে দাড়াল..আচ্ছা আপনি কি আমাকে ফলো করছেন.?
– পথ কেমন জানি ফিল করছে..বুকের ভিতর
ধুক ধুক করছে..
– কি হল উত্তর দিচ্ছেন না যে..
– কই না ত..আমি ত আপনার ফেবু
আইডি জানি না আর ফলো কিভাবে করব..
– আমি ফেবুর কথা বলছি না..আমি যেখানেই
যাই সেখানেই আপনি থাকেন..ব্যাপার কি..?
– পথ
কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না..তা দাড়িয়েই
কথা বলবেন না কি বসবেন..?
বসে কথা বলতে সমস্যা নাই ত আপনার..?
– মেয়েটা বসল..তারপর জিজ্ঞেস করল
আপনি কি করেন.?
– পথ উত্তর না দিয়ে বলল,আপনার
নামটা কি জানতে পারি..?
– নাম দিয়ে কি করবেন.?আগে আমার
প্রশ্নের জবাব দিন..

আসলে আমি আপনাকে ফলো করি না..কাকতালিয়
ভাবে আমাদের দেখা হয়ে যায়..হয়ত উপর
থেকেই সব করা হচ্ছে..আর
আমি একটা প্রাইভেট কম্পানিতে জব
করি..আর আমার নাম পথ.
– হুম..সবই বুঝলাম..তবে আপনার নামটা যেন
কেমন অদ্ভুত..পথ,শুনল েই কেমন
যানি একটা ফিল হয়..যাই হোক না বলতেই
সব বলে দিয়েছেন..আমার নাম
পরী..পরাশুনা করি ৩য় বর্ষ এবার..
– দু জনের
কথা বলতে বলতে সন্ধ্যা হয়ে এসেছে..সূর্য
অস্ত যাচ্ছে..পথ সূর্য অস্ত
যাওয়া দেখছে..সূর্যের লাল রঙ পরীর
মুখে এসে পরেছে..দেখতে এখন পরীর মতই
লাগছে..
– আচ্ছা আজ
তাহলে উঠি..সন্ধ্যা হয়ে এসেছে..
– আচ্ছা নাম্বারটা কি পেতে পারি..?
– পরী মুচকি একটা হাসি দিয়ে বলল
০১৯২৭ বাকি ডিজিট গুলো অন্য এক দিন
দেব..যে দিন আবার কাকতালিয়
ভাবে দেখা হবে আমাদের..
– পথ একটু অবাক
হয়ে চেয়ে রইল…পরী চলে গেল..
– ৭ দিন হয়ে গেল,পরীকে আর
দেখা যাচ্ছে না বাস স্ট্যান্ডে..পথ
পাগলের মত
হয়ে খুজে যাচ্ছে এখানে সেখানে..সারা শহরের
সব কয়টা রেস্টুরেন্ট,পার
্ক,শপিং মল..কোথাও
দেখা মেলে না পরীর..অফিসের কাজেও মন
বসে না..অফিস থেকে ৩ দিনের ছুটি নেয়
পথ..
– – বাসায়
ফিরে ভাবছে কি করবে এবার..কোথায় পাব
পরীকে..পরীর দেওয়া অর্ধেক নাম্বারটার
কথা মনে পরল…বাকি ডিজিটগুলা বসিয়ে অনেক
ট্রাই করল কিন্তু কোন নাম্বারই পরীর না..
– আজ ৮ম দিন…মার জানি কি হয়েছে..অনেক
অসুস্থ হয়ে পরেছে..হাসপাতাল
ে ভর্তি করেছে পথ..চিন্তায় কুল
কিনারা পাচ্ছে না..
– পথের একটা বন্ধু আছে..খুব কাছের বন্ধু..এই
শহরেই থাকে..একটা প্রাইভেট
কম্পানিতে জব করে..ছোট বেলা থেকেই এক
সাথে বড় হয়েছে দুই জন..পার্থ নাম..
– পথ ফোন করে সব কিছু জানায় পার্থকে..
– পার্থ সব শুনে চলে আসে হাসপাতালে..দুই
জনে মিলে অনেক
চিন্তা ভাবনা করে সিদ্ধান্ত নেয় মা সুস্থ
হলেই মাকে বিয়ের জন্য
হ্যাঁ বলে দেবে পথ..কিন্তু পথ
একা বিয়ে করবে না সাথে পার্থও..দুই বন্ধু
একসাথে বিয়ে করবে..
– পথ ডাক্তারের কাছে গেল..কত দিন
লাগবে সুস্থ হতে..?
– ডাক্তার বললেন প্রায় ১০-১৫ দিন ত
লাগবেই..তবে কাল বাসায়
নিয়ে যেতে পারবেন এবং পূর্ন
রেস্টে রাখবেন..
– পথ সস্থির নিশ্বাস ফেলল.
– মাকে বাসায় নিয়ে গেল পথ..
– পথ আর পার্থ
বসে আছে পার্কে..কি করবে এখন..পরীর কোন
দেখা নাই..মনের কথা ত বলতে পারলই
না অন্য
দিকে মাকে কথা দিতে হবে..চিন্তা করছে পথ..
– অন্য দিকে পার্থ চিন্তায় আছে তার
বিয়ের প্রস্তাব কি মেনে নেবে নিলুর
পরিবার..?
– নিলু হল পার্থের অর্ধাংশ..৫ বছরের
প্রেম তাদের..অনেক মধুর সম্পর্ক দু
জনের..নিলুর পরাশুনা শেষ হতে এখনো ২
বছর বাকি..সেই কলেজ লাইফ থেকে পরিচয়
দু জনের..প্রথম দিনেই ঝগরা..তারপর
আস্তে আস্তে প্রেম.
– নিলুর আজ আসার কথা পার্কে..সমস্যার
একটা সমাধান করার জন্য..
– পার্থ বসে বসে ঘাস চাবাচ্ছে আর
ভাবছে আর পথ আকাশ দেখছে..হটাত
সামনে এসে দাড়াল নিলু..
– এই ছাগল ঘাস চাবাচ্ছ কেন.?
– তুমি এসেছ এতক্ষনে..ঘাস চাবাব না ত
কি করব..আমি ত তাও কিছু করছি আর ঐ দেখ
আরেক জন চিন্তায় আকাশের
সীমানা মাপছে..
– নিলু পথকে সালাম দিয়ে বলল ভাল আছেন
ভাইয়া.?
– নাহ..ভাল আর কি করে থাকি..চিন্তায়
জীবন শেষ..
– নিলু দুই জনের সব কথা শুনল..তারপর
পার্থকে বলল আজই বাসায় প্রস্তাব
পাঠাতে..বাকি কাজ নিলু সামলে নিবে..আর
পথকে বলল ভাইয়া কি আর করবেন
যাকে খুজে পাওয়া যাচ্ছে না তাকে ভুলে যান..মায়ের
পছন্দের মেয়েকে বিয়ে করেন..
– হুম নিলু..আমিও তাই ভাবছি..পরী বসন্ত
বাতাসের মত এসে কাল বৈশাখি ঝরের মত
চলে গেল..যাকে খুজে পাওয়া যাচ্ছে যাবে না তাকে মনে রেখে লাভ
কি..আজই মাকে হ্যাঁ বলে দেব..আর পার্থ তুই
আজই কিন্তু প্রস্তাব পাঠাবি.
– পথ বাসায় এসে বসে বসে ভাবছে..তারপর
এক পর্যায়ে মার কাছে যায়.
– কি রে বাবু কিছু বলবি..?
– হ্যাঁ..মা আমি তোমার পছন্দের
মেয়েকে বিয়েতে রাজি..
– যাক
অবশেষে সুবুদ্ধি হল..তা মেয়ে দেখবি না.?
– নাহ..তুমি দেখেছ তাতেই
হবে..তুমি মেয়ে পক্ষের
সাথে কথা বল..বিয়ের দিন ঠিক
করে জানাও..পার্থকে জানাতে হবে..
– পথ মায়ের রুম
থেকে বেরিয়ে সোজা পার্থের বাসায়
চলে এল..
– কিরে পথ বলে দিলি তাহলে..আমিও
প্রস্তাব
পাঠিয়েছি..ওরা রাজি হয়েছে..নিলু সব
মেনেজ করে নিয়েছে..এখন তোর বিয়ের দিন
ঠিক হলেই হল..
– পার্থ আমার না পরীর জন্য কেমন
করছে মনটা..মনে হচ্ছে কি যেন
হারিয়ে ফেলছি..
– আরে মন খারাপ করিস না পথ.যা হবার
ছিল তাই হচ্ছে..চল শপিং এ যাই মন ভাল
হয়ে যাবে..
– চল তাই করি..মনটা ভাল
করা দরকার..তা ছারা বিয়ে ত ঠিক হয়েই
গেছে..মাকে একটা ফোন করে চল
বেরিয়ে পরি..
– দুই বন্ধু মিলে গেল শপিং করতে..খুব আনন্দ
করছে দুই জন..অনেক শপিং করল
বিয়ের..হটাৎ পিছন থেকে পরীর গলার
আওয়াজ.
– আরে পথ ভাই না..কেমন আছেন..?ওয়াও এত্ত
শপিং করছেন..ব্যাপার কি..?
– ভাল আছি না মন্দ
আছি তা জেনে তুমি কি করবে..কত
খুজেছি তোমাকে..কোথায়
হারিয়ে গিয়েছিলে..?অবশ্ য এখন এ সব
বলে আর কি লাভ..
– কেন.?লাভ নেই কেন.?আর আমি অসুস্থ
ছিলাম অনেক..
– ও..থাক ভালই আছ মনে হয়..ক দিন
পরে আমার বিয়ে..তাই আর পুরান
কথা তুললাম না..ভাল থেক..
– ওয়াও..congratul ation
অগ্রিম..আমাকে ইনভাইট করবেন না..?
– কি করে করব..তোমার ত শুধু অর্ধেক
নাম্বার জানি আর বাসার ঠিকানাও
জানি না..
– তাও ঠিক..তাহলে আপনার নাম্বার দিন
আমি বিয়ের দিন চলে আসব ফোন করে..আর
বাকি ৩টা ডিজিত নিন
৬৩৪..বাকি তিনটা বিয়ের দিন
গিফটে লিখে দেব..
– পথ অবাক..মেয়ে বলে কি..যাই হোক মনের
মানুষ ত..পথ নিজের নাম্বারটা দিয়ে দিল..
———–
– আজ পার্থ আর পথের বিয়ে..দুই বন্ধু এক
সাথে বরের সাজে সেজেছে..পার্থ অনেক
খুশি কিন্তু পথের মনটা আজও খারাপ..কেন
যে সে দিন পরীর সাথে দেখা হয়েছিল..
– সবাই এসে গেছে বিয়েও শেষ..পথের
বিয়ে হল মেঘ নামের এক
অজানা অদেখা মেয়ের সাথে..আর পার্থর হল
নিলুর সাথে..
– সবাই চলে যাচ্ছে..অনুষ্ঠা ন শেষ..পথ
এখনো অপেক্ষা করছে পরীর জন্য..শেষ
দেখাটা অন্তত দেখার জন্য..কিন্তু
পরী যে আসে না..
– বাসর রাত আজ পথের..অদেখা আর
অচেনা এক মেয়ের
সাথে যাকে সে এখনো দেখেনি..
– রুমে ঢুকতেই মেঘ একটা গিফট এগিয়ে দিল
পথকে..বড় ঘোমটা থাকার
কারনে চেহারাটা দেখতে পেল না পথ..
– গিফটা নিয়ে খুলতেই..
– সেখানে লেখা বাকি তিনটা ডিজিট
দিলাম মন চাইলে কল কর নইলে বিছানায়
আস..
– পথ অবাক হয়ে চেয়ে আছে লেখাটার
দিকে..তাহলে এই কি আমার পরী..?
– দেরি না করে ঘোমটা তুলতেই সেই চির
চেনা মুখটা দেখতে পেল পথ..এই ত আমার
পরী..
– কি অবাক হলেন.?খুজে পেলেন আপনার
পরীকে..
– তুমি কেন..?আমার ত মেঘের
সাথে বিয়ে হয়েছে..মেঘ কোথায়..?
– আমিই মেঘ..মেঘ জান্নাত পরী..এখন বলেন
পরীকে ভালবাসেন না মেঘকে.?কার
সাথে সংসার করবেন..?
– উত্তরে একটাই নাম
আসে পরী..আমি তোমাকে ভালবাসি পরী..অনেক
ভালবাসি..
– আর কিছু দিন পর বললে হয়ত আমাদের
বাচ্চারাও শুনতে পারত..তা কেমন লাগল
সারপ্রাইজ..সবই ছিল প্লান করা..আমার
শাশুরি আম্মা আর আমি দুজনে মিলেই এই
প্লান করেছি…
– ওও…আর আমি কষ্টে মরে যাচ্ছিলাম তার
দিকে খেয়াল নাই..
– খেয়াল আছে বলেই ত রোজ খোজ নিতাম
আপনার..
– তা আপনি করেই বলবে না তুমি করে..
– আমার না লজ্জা লাগছে এখন..
– ওরে আমার লজ্জাবতিরে..
এভাবেই খুনসুটি আর গল্পে কেটে যাচ্ছিল
দুই ভালবাসার পাখির দিনগুলো…
…..ছোট সে ঘরে জায়গা দিলাম
……মনের দুয়ার খুলে,
……বাসবে কি ভাল এমন করে
……সারা জীবন ধরে
=একবার যখন ধরেছি হাত
=ছারব না কভু
=তুমিও আমায় তেমনই বেস
=যেমনটা বেসেছিল এই হৃদয়..

কনকনে শীত । ঘন কুয়াশায় ঘেরা চারপাশ ,
একটু দুরেই বাঁধা পড়ে দৃষ্টি । তারপর আবার
কুয়াশা । গাঢ় , সাদা কুয়াশা ।

.
হ র র র . . হট . . হট . .
দশটি রুগ্ন পা একসাথে একই ছন্দে চলছে ।
সেই সাথে চলছে রূপালী লাঙল ,
চলছে জীবনের লাঙল . . . .
গরু দুটোর স্বাস্থ্যের অবস্থা খুব খারাপ ,
যতটা ওদের মালিকের । কেমন ঠকঠক
করে কাঁপছে ওরা , যেমনটা কাঁপছে ওদের
মালিকও । ওদের গায়ে যেমন কোন কাপড়
নেই , তেমনি ওদের মালিকের শরীরও প্রায়
পুরোটাই খালি ।
পরনে একটা ছেড়া গামছা চাড়া আর কিছুই
নেই ।
.
কলিম শেখের সম্বল বলতে এই দুটো গাই গরু ,
আর এক টুকরো আবাদি জমি । মাঝেমাঝে গরু
দুটোর জন্য তার খুব মন খারাপ হয় । গরু
দুটোর জীর্নশীর্ন শরীর দেখলে খুব
মায়া লাগে । কলিম শেখের ধারনা তার
শরীর দেখে গরু দুটোরও হয়ত মন খারাপ হয় ,
মায়া হয় । মুখে হয়ত ওরা কিছুই
বলতে পারে না , কিন্তু মাঝেমাঝে কেমন
যেন মলিন দৃষ্টিতে তার
দিকে তাকিয়ে থাকে ওরা !
.
কিরে ! গায়ে জোর নাই ! খাড়াইলি কেন ?
চল চল , টান লাগা . .
হ র র র . . হট . . হট . .
কলিম শেখ গরু দুটোর সাথে অনবরত
কথা বলে যাচ্ছে , আর গরু দুটো হাল
টেনে চলেছে বিরামহীন । লাঙলের পলায়
জমির বুক চিড়ে খন্ড বিখন্ড হয়ে যাচ্ছে ।
কলিম শেখ বড় বড় চোখ
করে তাকিয়ে আছে খন্ডিত মাটির
টুকরোগুলোর দিকে । এ যেন মাটি নয় , এক
এক টুকরো স্বপ্ন ।
ধোঁয়াতোলা ধবধবে সাদা ভাতের
স্বপ্ন . . . .
.
কলিম শেখের দুই ছেলে , দুই মেয়ে ।
ছেলে দুটো বিয়ে করে আলাদা হয়ে গেছে ।
আর মেয়ে দুটোরও বিয়ে হয়ে গেছে সেই
কবে ।
.
অনেক , অনেকদিন আগে বাবা রজব শেখ
কলিমের হাতে তুলে দিয়েছিলেন এই লাঙল-
জোয়াল । তখন কলিমের বয়স বার কি তের
হবে । দীর্ঘ এতগুলো বছর কলিম শেখ সেই
লাঙ্গল-জোয়ালের ভার বহন করে চলেছেন ।
জীবনের এই পড়ন্ত বেলায় এসেও এতটুকু
বিশ্রাম নেই , এতটুকু ক্লান্তি নেই ।
ক্লান্তি হয়ত আছে , কিন্তু
সেটা মেনে নিতে তিনি একেবারেই নারাজ
। তাইতো আজও শক্ত হাতে ধরে রেখেছেন
জীবনলাঙলের হাতল . . . .
.
ছেলে-মেয়েরা চেড়ে গেলে কি হবে , একজন
কিন্তু এখনো চেড়ে যায় নি কলিম শেখকে ।
যাকে তিনি পষ্ণাশ বছর আগে পেয়েছিলেন
কোন এক ঝড়ের রাতে । সেই রাতের
কথা কলিম শেখের স্মৃতিতে আজও উজ্জল ,
যেন এই সেদিনের কথা . . . .
.
কলিম শেখের বয়স তখন ষোল কি সতের ।
কি যেন এক কঠিন রোগে আক্রান্ত হলেন রজব
শেখ । বাঁচার কোন আশা নেই আর । একদিন
রাতে তিনি সবাইকে ডেকে বললেন , আজ
রাতেই তার সময় শেষ । মৃত্যুর
আগে তিনি ছেলের বউয়ের মুখ দেখতে চান ।
তাই তাড়াহুড়ো করে সেই রাতেই কলিম
শেখের বিয়ে দেয়া হয় পাশের গ্রামের
“নছিমন বেওয়া ” এর সাথে । নছিমনের
গায়ের রং কিছুটা কালো ছিল । তাই বাসর
রাতে নছিমনকে দেখে কলিম শেখের মুখটাও
কিছুটা কালো হয়ে গেল ।
ততক্ষনে বাহিরের আকাশটাও
কালো হয়ে গিয়েছিল হয়ত । শুরু হল প্রচন্ড
ঝড় । ভোর রাতের দিকে ঝড় থেমে গেল ,
সেই সাথে থেমে গেল রজব শেখের জীবন
প্রদীপও । কি অদ্ভুত ব্যাপার !
লোকটা আগেই টের পেয়ে গিয়েছিল তার
মৃত্যুর কথা !
.
হ র র র . . হট . . হট . .
কলিমের চোখে পানি । অস্ফুট
স্বরে তিনি বলে উঠলেন , কেমন আছেন
আব্বা . .
তারপর উত্তর দিকের ঐ ঝোপঝাড় ঘেরা পুকুর
পাড়টার দিকে তাকালেন । সেখানেই
ঘুমিয়ে আছেন রজব শেখ গত পষ্ণাশ বছর
ধরে . . . .
.
দীর্ঘ এই জীবনে কলিম শেখ অনেক কিছুই
হারিয়েছেন , অনেকেই
তাকে চেড়ে চলে গেছে । কিন্তু সেই
কালো মেয়েটি আজো রয়ে গেছে তার পাশে ।
কলিম শেখ এবার হাল চেড়ে বসে পড়লেন ।
কুয়াশা তাকে চারপাশ
থেকে ঘিরে ধরেছে যেন । কলিম শেখ
জানেন নছিমন আর বেশী দিন
থাকবে না তার সাথে , যে কোন সময়
চলে যেতে পারে ওপারের ঠিকানায় । গত
পষ্ণাশ বছর ধরে এই কালো মেয়েটাই তার
জীবনকে আলোকিত করে রেখেছিল , সেই
আলো আজ নিভু নিভু ।
.
কলিম শেখ ভেবেই পায় না ,
কিভাবে নছিমন বিহীন
দিনগুলো কাটবে তার । প্রতিদিন
সকালে কে ঘুম ভাঙিয়ে দেবে ? কে পানের
খিলি বানিয়ে দেবে ? কাজ থেকে ফেরার
পর কে শাড়ির আঁচলে ঘাম মুছে দেবে ?
কে তালপাতার পাখায় ক্লান্তিহীন বাতাস
করে যাবে ? জোছনা রাতে কে চাঁদের বুড়ির
গল্প শুনাবে ? ঘুম না আসলে কে মাথায়
বিনি কেটে দেবে ? ঝড়ের রাতে যখন
বাবার কথা মনে পড়বে , তখন
কে তাকে সান্তনা দেবে ?
.
নছিমনকে চাড়া একটি মুহুর্তও
কল্পনা করতে পারেন না কলিম শেখ । সেই
নছিমন আজ ধীরে ধীরে মৃত্যুর
দিকে এগিয়ে চলেছে , অথচ তার কিছুই
করার নেই . . . .
.
কলিম শেখ
ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগলেন . .
গাই দুটো ঘাড় বাকা করে তাকিয়ে আছে তার
দিকে । কি অদ্ভুত ব্যাপার ! গাই দুটোর
চোখগুলোও কেমন ভেজা . . ! !
.
ঐতো সূর্য উঠে গেছে । কুয়াশা কাটতে শুরু
করেছে । নরম রোদে চারপাশটা উজ্জল
হয়ে উঠছে ধীরে ধীরে । কলিম শেখও
উঠে দাড়ালেন সত্তর ছুঁইছুঁই জরাজীর্ন এক
শরীর নিয়ে । মাটির টুকরোয়
জমে থাকা ফোঁটায় ফোঁটায় শিশির
বিন্দুগুলো শুকাতে শুরু করেছে ধীরে ধীরে ।
শুকাতে শুরু
করেছে কোঠরে লুকিয়ে থাকা কলিম শেখের
অশ্রুসিক্ত ছোট্ট ছোট্ট চোখ দুটোও ।
.
হ র র র . . হট . . হট . .
স্বপ্ন কখনো মরে না ,
কখনো থেমে থাকে না ।
গরু দুটোর কাঁধে ভর
দিয়ে এগিয়ে চলেছে জোয়াল , লাঙল । সেই
সাথে এগিয়ে চলেছে কলিম শেখের স্বপ্ন ।
নছিমনকে নিয়ে আরও অনেক দিন
বেঁচে থাকার স্বপ্ন . . . .

MARI themes

Powered by Blogger.